সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. জাকির হোসেন ওরফে পলিথিন জাকিরের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ,ভূমিদস্যুতা, নৌ চাঁদাবাজি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে জেলা প্রশাসকের কাছে জনপ্রতিনিধিরা স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ান-উল-ইসলামের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি প্রদান কালে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সেলিম রেজার নেতৃত্বে সকল সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জন প্রতিনিধিরা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, উপজেলার কান্দারগাঁও গ্রামের মমতাজউদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন। একসময় মাছ বাজারে পলিথিন ব্যাগ বিক্রি করে সংসার নির্বাহ করতো। ফলে সবাই তাকে ‘পলিথিন জাকির’ নামেই চেনেন। পরে মেঘনা ঘাটে হকারির পাশাপাশি এলাকায় বালু ভরাট ও দালালিও চালিয়ে যান সমান তালে। পরবর্তীতে তার নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। সম্প্রতি ‘সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি’ নামে একটি আবাসন প্রকল্পের জমি ক্রয় ও বালু ভরাটের দায়িত্ব পেয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে জাকির হোসেন। তার প্রভাবে স্থানীয় উপজেলা যুবলীগের হাত ধরে পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বনে যান। যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে জাকির হোসেন। এর পর থেকেই শুরু হয় তার দখল বানিজ্য ও দস্যুতা। সাধারণ মানুষের জমি দখল, ভূয়া দলিলে জমি বিক্রি এবং বালু ভরাটের টেন্ডারবাজি করার পর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। জাকিরের সহযোগী সন্ত্রাসী ভাগিনা সৈকত, মিজানুর রহমান, সজীব মিয়া, কাইল্যা শাহ আলী, ও শাহীনের নেতৃত্বে মেঘনা নদীতে চলাচলরত বিভিন্ন নৌযান থেকে চাঁদাবাজি, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে থাকে। এসব কর্মকান্ডের০ প্রতিবাদে এলাকাবাসী কয়েক দফায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করলেও কোন প্রতিকার পায়নি।
স্মারক লিপিতে জনপ্রতিনিধিরা আরো উল্লেখ করেন, ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি জাকির হোসেনের নামে দুটি হত্যা ও নৌ-চাঁদাবাজিসহ প্রায় ডজন খানেক মামলা রয়েছে। ২০১২ সালে রিপন হত্যা, ২০১৪ সাথে সাধন হত্যা ও ২০১৫ সালে গোলজার হত্যায় জড়িত জাকির হোসেন। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি খুন হয় জাকিরের সকল অপকর্মের সাক্ষী ভাগিনা মোহাম্মদ আলী। ভাগিনা মোহাম্মদ আলী হত্যার মামলার ভয় দেখিয়ে সে কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে সে।
জানা যায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে‘মেসার্স পিয়াল এন্টারপ্রাইজ’ নামে বৈদ্যেরবাজার থেকে মেঘনা ঘাট পর্যন্ত ইজারা নেন জাকির হোসেন। অতিরিক্ত চাঁদাবাজির কারণে তার ইজারা বাতিল করা হলে ‘কান্দারগাঁও যুব কল্যাণ সমিতি’র নামে আবারও ইজারা নেন। একই অভিযোগে তা বাতিল হলে পুনরায় ইজারা পায় কান্দারগাঁও গ্রামের একতা সংঘের সভাপতি আমজাদ হোসেন। কিন্তু ইজারার নিয়ন্ত্রণ থাকে জাকিরের হাতেই। ইজারা বাতিল হলেও জোরপূর্বক নৌপথে চাঁদাবাজি করতেই থাকে জাকির বাহিনী। সোনারগাঁ উপজেলায় নৌপথের চাঁদাবাজির একচ্ছত্র অধিপত্য জাকিরের। এসব অপকর্ম বন্ধে ও তার বিচারের দাবীতে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের নির্বাচিত সকল ইউপি সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনায় স্মারকলিপি প্রদান করেন।
অভিযুক্ত পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. জাকির হোসেন বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। জনপ্রতিনিধিদের আমার দ্বারা কোন প্রকার ক্ষতি হয়েছে এমন কেউ বলতে পারবে না। তবে স্থানীয় একটি কোম্পানির বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে অপ প্রচার করা হচ্ছে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ান উল ইসলাম জানান, জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা স্মারকলিপি দিয়েছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply