ডঃ শাহানুর হোসেন,ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্র:
একথা অনস্বীকার্য্য যে আমাদের সকল ঐতিহাসিক অর্জনের আলোকবর্তিকা আমাদের ছাত্রসমাজ। একটি বিশ্ববিদ্যালয় আর তার ছাত্রদের কেন্দ্র করে যে একটি রাষ্ট্রের উদ্ভব হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের বাংলাদেশ। আমাদের ছাত্রদের এই ভূমিকা পৃথিবীর ইতিহাসে অতুলনীয়। ফ্যাসিবাদের মোকাবেলায় সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে ব্যর্থ, দেরিতে হলেও আমাদের ছাত্রসমাজের এই জাগরণ পুরো জাতিকে দেখিয়েছে নুতন আশার আলো।
আবার এটাও সত্য যে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের ১৯৫২, ১৯৬৯,১৯৭১, এবং ১৯৯০ এর মত যুগান্তকারী অর্জনগুলো বহন করার মত সক্ষমতা আমাদের ছাত্রদের ছিলনা, ফলে অনিবার্যভাবেই তাদের দ্বারা অর্জিত বিজয় প্রতারক রাজনৈতিক নেতৃত্বের কায়েমী স্বার্থ হাসিলে ব্যবহৃত হয়েছে। আমাদের ছাত্রসমাজ বিজয়ের পর প্রতিবারই ক্ষমতালোভী রাজনীতির লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে করে আমাদের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা বার বার ব্যাহত হয়েছে।
আমাদের ছাত্রদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হয় স্বাধীনতার পর পর । ১৯৭৩ সালে স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ডাকসুর ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতির পবিত্রতা ভুলুন্ঠিত হয়। তারপর ‘সাত খুনের’ ঘটনার মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতির সকল গৌরবকে সমাহিত করা হয়। শুরু হয় লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি। এরপরের ইতিহাস আমাদের জানা। আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ, বিএনপির ছাত্রদল, জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রশিবির এই দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোকে আয়না ঘরে পরিণত করে রেখেছিল দীর্ঘকাল। শিক্ষাঙ্গনগুলো ছিল সত্যিকার অর্থে ছাত্র রাজনীতিবিহীন। মারামারি, খুনোখুনি, ছাত্র নির্যাতন ছিল নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা।
ছাত্র-জনতার রক্তের অক্ষরে লিখিত অভূতপূর্ব অভ্যূত্থান প্রিয় মাতৃভূমির জন্য খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার অপার সম্ভার। দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের যাঁতাকলে পিষ্ট নিপীড়িত নিষ্পেষিত মানুষ পেয়েছে মুক্তির স্বাদ। এমতাবস্থায় এই বিজয়কে সুসংহত করে তাকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতির কোন বিকল্প নেই। রাজনৈতিক দলের লেজুড়ভিত্তি কিংবা ক্ষমতাসীনদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার ছাত্র রাজনীতির মাহাত্ম্যকে কলুষিত করে। ছাত্ররা পড়াশুনার পাশাপাশি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করবে, বিতর্ক করবে, নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকবে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবে এটা কাম্য। আবাসিক হলগুলো সকল ধরণের দখলদারিত্ব ও নিপীড়ন থেকে মুক্ত হোক, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-সিট্ বাণিজ্য থেকে মুক্ত থাকুক আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
সুস্থ্য ছাত্র রাজনীতির সূচনা হোক নুতন করে। ছাত্রদের মাঝ থেকেই গড়ে উঠুক দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব, শুরু হোক নুতন রাজনীতির পথচলা। ভবিষ্যতে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ হলে, পুনরায় ফ্যাসিবাদের উত্থান হলে ছাত্রদের সমবেত কণ্ঠ আবার গর্জে উঠুক।
Leave a Reply